গরম কালের পুরোনো গাছ এর পরিচর্যা শুরু করুন এখন থেকে :-
শীত প্রায় শেষের পথে, আবার গরমের গাছ গুলো ধীরে ধীরে তাদের ঘুমন্ত দশা কাটিয়ে জেগে উঠবে,ছাদে অনেক অনেক ফুল ফোটাবে।
এই ঘুমন্ত দশা চলা কালিন তাদের যত্ন প্রায় করা হয়না বললেই চলে, যেমন তাদের খাদ্য না দেয়া পাশাপাশি তাদের যত্ন করা টাও কমে আসে।
কিন্তু এবার তো তাদের জেগে ওঠার পালা, বা ঘুম থেকে ধীরে ধীরে জাগানোর পালা, তাদের ঘুম ভাঙিয়ে আবার চনমনে করে তুলতে আমাদের কেই তাদের কিছু সাহায্য করতে হবে, যেমন তাদের খাবারের ব্যবস্থা করে দেয়া, মাটি গুলো কে তাজা করা, তাদের ডাল ছাটাই করা ইত্যাদি ইত্যাদি।
তাহলে এবার ধীরে ধীরে জেনে নেওয়া যাক তাদের পরিচর্যা।
এতদিন যাবৎ গরমের গাছ গুলি তে আমরা কোনো প্রকার খাদ্য প্রয়োগ করিনি, সুতরাং তাদের এবার অল্প অল্প খাবার দিয়ে জাগাতে হবে।এবার প্রশ্ন আসে কি দেবেন, ফেব্রুয়ারি মাস পরা থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের১৫তারিখ পর্যন্ত গাছ এর শিকড় ও ডাল কাটাই ছাঁটাই এর আগে অব্দি পাঁচদিন ব্যাবধানে মোট তিন বার সর্ষের খোল+ ডি এ পি ৪দিন পচিয়ে সেটা টবের মাটিতে দিন।
*পরিমাণ - ১লিটার জলে ৬০গ্রাম সর্ষের খোল সাথে ২০গ্রাম ডি এ পি ভেজাবেন, ৪দিন পরে সেটা আরো ৯লিটার জলের সাথে মিশিয়ে নেবেন, এবং দশ ইঞ্চি এর টবে গাছ প্রতি ৫০০মিলি করে দেবেন।
এরপর আসে গাছ গুলি এর শিকড় কাটাই ছাটাই এর পর্ব -
এটা ফেব্রুয়ারি মাসের ১৫-২৮তারিখ এর মধ্যে করে নিতে পারেন।
টবের পুরোনো মাটি পাল্টানোর আমার মতে কোনো প্রয়োজন নেই, সেই পুরোনো মাটি তে কিছু সার মেসালেই সেই মাটি আবারও ব্যাবহার যোগ্য করা যাবে।সুতরাং মাটিতে মেশানোর জন্য সার এখন থেকেই বানিয়ে রাখতে হবে।
*সার তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ -
১)গোবর সার/ভার্মি কম্পোস্ট/পাতা পচা সার (যে যেটা পাবেন সেটাই ব্যাবহার করা যাবে) পরিমাপ হবে - ১০কেজি
২)সিং কুচি - ১কেজি( যারা সিং কুচি ব্যাবহার করবেন না তারা পরিবর্তে ২কেজি বাদাম খোল নেবেন)
৩)সর্ষের খোল- ১কেজি
৪) হাড় গুড়ো(স্টিম হলে ভালো হয়)- ১কেজি ৩০০গ্রাম(যারা হাড় গুড়ো ব্যাবহার করবেন না তারা সুপার ফসফেট নেবেন)
৫) মিউরেট অফ পটাস(লাল)- ৭০০গ্রাম (সালফেট অফ পটাস দিলে ৮০০গ্রাম
৬)নিম খোল - ১কেজি(পরিবর্তে ফুরাডন ৪০০গ্রাম)
এই সব উপকরণ গুলি একসাথে ভালো ভাবে মিশিয়ে বস্তায় ভরে ১৫দিন রেখে দেবেন। জল মেশানোর দরকার নেই কারণ ভালো মানের গোবর সার বা ভার্মি কম্পোস্ট হলে তাতেই ময়েশ্চার থাকে, একেবারে ড্রাই থাকলে আগে গোবর সার/ভার্মি তে জল ছিটিয়ে নেবেন পরে বাকি উপকরণ মেশাবেন।
এবার আসা যাক শিকড় কতটা ছাটাই করবেন - দশ ইঞ্চি টব থেকে গাছ বের করে শিকড় ছাটাই করবেন ৬ইঞ্চি/৭ইঞ্চি মাপের টবের আকৃতির, মাটি থেকে শিকড় আলাদা করে মাটি টা একবার চালুনি দিয়ে চেলে নেবেন, দেখবেন কিছু মাটির ডেলা কাটা শিকড় লেগে থাকবে সেগুলো আর নেবার প্রয়োজন নেই। তার পরিবর্তে আপনার টবের মাটি যে মিশ্রণ এ তৈরি সেই ভাবেই কিছুটা নতুন মাটি দিয়ে সেই মিশ্রণ বানিয়ে নেবেন এবং টব প্রতি ৫০০গ্রাম করে নতুন মিশ্রণ এর মাটি মেশাবেন।
এবার উপরে বলে দেয়া সার ৩০০গ্রাম করে দশ ইঞ্চি টব এর গাছের জন্য ব্যাবহার করবেন এবং ওই পুরোনো মাটির সাথে মেশাতে পারেন বা মাটি ভরাট করার সময় উপর দিকে ২ইঞ্চি ফাকা রেখে এই সার টি চাপান হিসেবে দিয়ে বাকি টুকু মাটি চাপা দিতে পারেন।
৮ইঞ্চি তে সার মেশাতে হবে ২৫০গ্রাম,৬ইঞ্চির জন্য ২০০গ্রাম,১২ইঞ্চির জন্য ৪০০গ্রাম
এর পরবর্তি তে ডাল কাটাই ছাটাই পর্ব-
শিকড় ছাটাই এর দশ থেকে বারো দিন পর ডাল ছাটাই
করবেন এবং ডাল ছাটাই করার ৫দিন পূর্বে ১লিটার জলে ২মিলি টাফগর মিশিয়ে গাছে স্প্রে করবেন ভালো করে, এবং এর তিনদিন পরে বাভিস্টিন/সাফ/এম ৪৫ বা যে কোনো ফাঙিসাইড ১লিটার জলে ২গ্রাম মিশিয়ে স্প্রে করবেন।
শুকনো ডাল,শুকনো পাতা, শরু লিকলিকে ডাল ছেটে ফেলবেন, এবং পেন্সিল এর মত মোটা ডাল গুলো রাখবেন এবং এগুলো কাটবেন গাছের মোট উচ্চতার এক তৃতীয়াংশ।
অর্থাৎ ৪ফুট গাছ হলে ডাল উপর থেকে এক ফুট কাটবেন।
ডালের কাটা অংশে ফাঙিসাইড এর প্রলেপ লাগিয়ে দেবেন।
∆যাদের গাছ ৩-৪ মাসের পুরোনো তারা হালকা ছাটাই করবেন।এবং মাটি বের করে শিকড় ছাটাই এর প্রয়োজন নেই, তারা 2ইঞ্চি চওড়া ও ৪ইঞ্চি গভীর ভাবে মাটি তুলে ওই উপরে বলে দেয়া সার টি চাপান হিসেবে দেবেন।টব এর মাপ অনুযায়ী সার এর পরিমান একই রকম হবে।
এই সব বয়সি গাছ বর্ষা আসার আগে আগে রিপট করলে ভালো হবে।
ডাল ছাটাই এর পরবর্তী পরিচর্যা -
মোটামুটি ভাবে ছাটাই এর ১০-১৫দিন পর থেকে নতুন কচি পাতা বের হতে থাকে এই সময় থেকে পুনরায় পূর্বে বলে দেয়া সর্ষের খোল ও ডি এ পি ভেজানো জল দেবেন সাত দিন পর পর।
এই সময় লক্ষ্য করলে দেখা যায় নতুন কচি পাতা গুলো তে পোকার আনাগোনা বেরে যায় ,পাতা কুকড়ে যাওয়া এই সমস্ত প্রভাব বেশি লক্ষ্য করা যায় তাই কচি পাতা বেরোনোর পর থেকে ৭দিন অন্তর অন্তর ইমিডা-ক্লোরোপিড ১৭.৮, এসিটামিপ্রিড,থায়মেথাক্সম গ্রুপের কিটনাশক ১গ্রাম/১মিলি ১লিটার জলে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যাবহার করলে ভালো রেজাল্ট পাওয়া যায়। এবং দশদিন অন্তরালে একবার করে বাভিষ্টিন/সাফ/এম ৪৫ এগুলো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যাবহার করা ভালো।
ছাটাই করার ২৫-৩০দিন পর গাছ পাতায় ভরে ওঠে এই সময় এনপিকে ২০-২০-২০ 2গ্রাম+ ম্যাগনেসিয়াম সালফেট ১/২গ্রাম এক লিটার জলে স্প্রে করলে গাছের আকার আকৃতি ভালো হয়, এবং গাছের এই সময় থেকে পনেরো দিন অন্তরালে মবোমিন/এগ্রমীন গোল্ড/রেক্সোলিন এই জাতীয় অনুখাদ্দ্যো পনেরো দিন পর পর ব্যাবহারে গাছ আরো প্রনজ্বল হয়ে ওঠে।
∆শিকড় ছাটাই এর একমাস পর থেকে মাটিতে মিক্স সার দিতে হবে প্রতি মাসে-
এই নিয়ে মার্চ মাসে আগামী পোস্টে বলে দেওয়া হবে।
আশা রাখবো এই লেখা আপনাদের কাজে আসবে।
সবাই সুন্দর ভাবে গাছ করুন,আপনারাও ভালো ও সুস্থ থাকুন ,গাছের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করুন,গ্রুপের সাথে থাকুন।
ধন্যবাদ।
Leave a comment